শীতে বয়স্ক প্রিয়জনদের এসব যত্ন নিচ্ছেন তো

বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় শীতের সময় দেখা দিতে পারে নানা অসুখ-বিসুখ। বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বাস্থ্য সতর্কতা এবং সঠিক যত্ন শীত মৌসুমে খুবই দরকার। এ বিষয়ে তাই পরিবারের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

শীতে বয়স্কদের শারীরিক জটিলতা
১. শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা: শীতে প্রবীণেরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায়। যেমন ফ্লু, নিউমোনিয়া কিংবা অ্যাজমা। অনেক সময় এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।
২. হাড়ে ব্যথা: শীতকালে কাজকর্ম, শারীরিক পরিশ্রম বা নড়াচড়া কম হয় বলে ব্যথার সমস্যাগুলো বাড়ে। তাই শীতেও সচল থাকতে হবে।
৩. আঙুলের রং পরিবর্তন: তীব্র ঠান্ডায় হাত-পা নীল হয়ে যাওয়াকে বলে ‘রেনোড ফেনোমেনন’। এতে ত্বকে অস্বাভাবিক অনুভূতি হওয়া, রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে না হওয়া, হাতে ও আঙুলে ব্যথা, কবজি ফুলে যাওয়া, ত্বকের ক্ষত, মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
৪. মানসিক সমস্যা: শীতকালে প্রবীণেরা অবসাদগ্রস্ত হতে পারেন, দেখা দিতে পারে নানা মানসিক রোগ। তাঁরা সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করেন। ট্রমা ও বিষণ্নতায় ভোগা এসব মানুষের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
৫. চর্মরোগ: শীত এলেই কিছু চর্মরোগ দেখা যায়। যেমন: চামড়ার শুষ্কতা, চুলকানি, হাত-পা ফেটে যাওয়া, মুখে-জিহ্বায় ঘা।
৬. হাইপোথার্মিয়া: যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তুলনায় কমে যায় এবং বিপাকীয় কার্যাবলি স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয় না, তখন এই জটিলতা দেখা দেয়, যেখানে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। অতিরিক্ত শীতে বয়স্কদের এ সমস্যা বেশি হয়।

বয়স্কদের যত্নের জন্য টিপস
১. উষ্ণ রাখুন: অপ্রয়োজনে বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করুন, বিশেষ করে সকাল ও রাতে। যথাসম্ভব ঘরে রাখতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই কানটুপি, মাফলার, জুতা-মোজার পাশাপাশি হাতমোজাও ব্যবহার করা উচিত। তাঁদের উষ্ণতার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. পোশাক: আরামদায়ক পোশাক বাছাই করুন। মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা আরামদায়ক কাপড় বেছে নেওয়া যেতে পারে। সব সময় তাঁরা যেন পরিমিত শীতবস্ত্র পরে থাকেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বুক, কান ও পা গরম কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। ঘুমানোর সময়, দিনে বা রাতে গলা ও কানে কাপড় কিংবা মাফলার জড়িয়ে রাখতে হবে। হাতে–পায়ে পরতে হবে মোজা।
৩. ঘর: এমন একটি ঘর নির্বাচন করুন, যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে। এতে ঘরটা বেশ গরম থাকবে, শীতও কম লাগবে। আরাম অনুভব হবে। এটি সম্ভব না হলে রুম হিটারের ব্যবস্থা করতে হবে। চাদর, বালিশের কাভার নিয়মিত পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিতে হবে। বিছানা যাতে শীতল না হয়ে যায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন।
৪. পানি পান: শারীরিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই। কড়া শীতে তৃষ্ণা অনুভূত হয় না। ফলে শরীরের জন্য যতটুকু পানি প্রয়োজন, অনেক সময় তা পান করা হয় না। পর্যাপ্ত পানির অভাবে  ব্যাহত হয় শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম। যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কক্ষ তাপমাত্রার পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি পান করান। গরম তরলজাতীয় খাবারও খাওয়াতে পারেন, যেমন স্যুপ।

৫. পুষ্টিকর খাবার: শীতে বয়স্কদের বেশি করে শাকসবজি খেতে দিন। গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রতিদিনের ভিটামিন–মিনারেলের অভাব পূরণ করে শীতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। নিয়মিত লেবু দিয়ে চা খাওয়া যায়। এটি শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করবে। এ ছাড়া প্রচুর ফল ও ফলের রস খেতে হবে। এটি শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর করবে। ফলে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে, যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। এ সময় প্রচুর শাকসবজিও খেতে হয়।

৬. হালকা ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ঠান্ডার কারণে বাইরে বের হতে না পারলে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি, হাত-পা নাড়াচাড়া করুন। ব্যায়াম করলে সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি রোগ কম হয়। চাইলে বিকেলে তাঁদের নিয়ে পার্কে বা পছন্দসই কোনো স্থানে বেড়াতে যেতে পারেন। এতে তাঁদের শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
৭. ত্বকের যত্ন: শীতে বয়স্কদের ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই তাঁদের জন্য মানসম্মত ক্রিমের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত নখ কেটে দিতে হবে। তাঁদের ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা অলিভ অয়েল অথবা শর্ষের তেল ব্যবহার করুন। বয়স্কদের ত্বকের পরিপূর্ণ যত্ন নিতে ত্বকবিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।

আরও কিছু পরামর্শ
* অজু, গোসলসহ নানা কাজেও গরম পানি ব্যবহার করতে দিন, এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
*শীতের সময় রাত জাগা ক্ষতিকর। তাই দ্রুত শুয়ে পড়ার অভ্যাস করান। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
*প্রবীণ বা বৃদ্ধদের মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত রাখুন।
*উষ্ণ সূর্য উপভোগ করুন, যা শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করে। সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বজায় রাখার জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ, মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্যও ভিটামিন ডি প্রয়োজনীয়।
*জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ অন্য যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Please share for others

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recently Published

error: